পাওয়ার ব্যাংক কেনার আগে জেনে নিন কিছু বিষয়


এখন আমাদের প্রায় সবারই একটি করে পাওয়ার ব্যাংক রয়েছে। আর যাদের নেই তারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে কিনছেন! কিন্তু, আপনি কি জানেন না জেনে বুঝে পাওয়ার ব্যাংক কিনলে আপনি যেমন ঠকতে পারেন ঠিক তেমনি আপনার প্রিয় স্মার্টফোন বা গ্যাজেটটিও হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই, পাওয়ার ব্যাংক কেনার আগে আমাদের যে ভুলগুলো হয় সেগুলো আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, যাতে করে পরবর্তী সময়ে অন্তত আর আপনারা এই একই ভুলগুলো আর না করেন।চলুন তাহলে, পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় আমাদের করা সেই ভুল গুলো সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক।
পাওয়ার ব্যাংক কি?
ভুল গুলো ধরিয়ে দেয়ার আগে একটু আগে পাওয়ার ব্যাংক সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। যদিও আমার বিশ্বাস আপনারা সবাই এ সম্পর্কে জানেন তবুও যদি কেউ না জেনে থাকেন তবে তাদের কাজে আসবে।
পাওয়ার ব্যাংককে সোজা ভাষায় বলা চলে একটি ব্যাক-আপ ব্যাটারি বা পোর্টেবল চার্জার। এই ডিভাইসটি ব্যবহার করে আপনি যেকোনো স্থানে যেকোনো জায়গায় আপনার স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা অন্যান্য গ্যাজেট চার্জ করতে পারবেন। পাওয়ার ব্যাংক অনেক ধরণের হয়ে থাকে, মূলত ধরণগুলো ক্যাপাসিটির উপরেই নির্ভর করে। যাই হোক, পাওয়ার ব্যাংক সম্পর্কে জানলাম, এখন চলুন মূল টপিক শুরু করা যাক।
১। কম দামে বেশি ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক কেনা বেশির ভাগ মানুষই সম্ভবত কম দামে কিছুটা বেশি পাওয়াতেই বিশ্বাস করে থাকে, আর ফলেই আমরা যে কোন প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেই কম দামে পাওয়া যায় কি না তা খোঁজ করে থাকি। আর এভাবেই যখন আমরা পাওয়ার ব্যাংক কিনতে যাই তখনও বেশিরভাগ মানুষই কম দামের বেশি ক্যাপাসিটি যুক্ত পাওয়ার ব্যাংক কিনে আনি। কিন্তু, আপনি কম দামে কিনে বেশি ক্যাপাসিটি পেলেও কিন্তু সুবিধা বা সার্ভিস সেই কমই পাবেন। কেননা বেশির ভাগ বেশি ক্যাপাসিটি যুক্ত কম মূল্যের পাওয়ার ব্যাংকের মধ্যে ব্যবহার করা হয় রিফারবিশ ব্যাটারি, অর্থাৎ পুরাতন ব্যাটারিই কিছুটা পলিশ করে ব্যবহার করা আরকি! এতে করে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো খুব কম খরচে বেশি ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক বাজারে সরবরাহ করতে পারে, আর আমরাই সেগুলো কিনে মাঝে মাঝে ধরা খাই।
তাই, পাওয়ার ব্যাংক কেনার ক্ষেত্রে আমি মনে করি ওয়ারেন্টি সহ পাওয়ার ব্যাংক কেনা বা এমন কোন ব্র্যান্ডের পাওয়ার ব্যাংক কেনা উচিৎ যেগুলো ইতিমধ্যেই ভালো বা রিলায়াবল প্রোডাক্ট হিসেবে বাজারে পরিচিত। অবশ্যই, এগুলোর মূল্য কিঞ্চিৎ বেশি হবে তবে আপনি সেই কিঞ্চিৎ বেশি খরচের বিনিময়ে ভালো সার্ভিসই পাবেন। অন্তত, ঠকবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।
২। ক্যাপাসিটি অনুযায়ী পাওয়ার ব্যাংক কেনা অনেক সময়ই আমরা পাওয়ার ব্যাংক কিনতে গেলে খুঁজি ক্যাপাসিটি কোনটির বেশি! এখন বাজারে বেশিরভাগ মানুষই কিনছে ১০৪০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের শাওমির পাওয়ার ব্যাংকগুলো। কিন্তু অনেকেই আবার দেখা যায় এর চাইতেও বেশি ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক খুঁজে থাকেন। না, বেশি ক্ষমতার পাওয়ার ব্যাংক নেয়াটা কোন দিক দিয়েই লসের নয় তবে আপনার মাথায় রাখতে হবে আপনার ডিভাইসের সবচাইতে ভালো ব্যবহার কীভাবে করা যায়, অন্তত এরকমই উচিৎ। আপনার যদি ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংকেই কাজ চলে যায় তাহলে অহেতুক আপনি কেনই বা ২০০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার খোঁজ করবেন?! একটা কথা মাথায় রাখবেন, আপনি যত বেশি ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক কিনবেন সেটা আকারে কিছুটা বড় এবং ভারী হবে। আর বর্তমান যুগটাই যখন বলা চলে কমপ্রেশনের যুগ তাই একসময় দেখা যাবে বড় পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে আপনিই ঘুরে বেড়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না।
৩। পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারি সেল ইগনোর করা উপরের দুটি পয়েন্টেই মূলত বলেছি যে আমরা মূলত পাওয়ার ব্যাংক কিনতে গেলে খেয়াল করি ডিভাইসটির মূল্য এবং ক্যাপাসিটি। অনেকেই, এর ব্যাটারি সেল সম্পর্কে জানিনা বা জানতে চাইও না। কিন্তু, আপনি কি জানেন যে একটি পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারির সেলর মাধ্যমেই মূলত আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে সেই ব্যাটারিটি মূলত কতদিন সার্ভাইভ করতে সক্ষম হবে বা আপনাকে সার্ভিস দিয়ে যাবে।
৫। কেনার সময় অন্যান্য ফিচার সম্পর্কে খেয়াল না করা বুঝলাম যে এই ডিভাইসটি শুধু মাত্র আমরা আমাদের ডিভাইস চার্জ করার জন্য ব্যবহার করে থাকি। তাই বলে, এটি কেনার সময় আমরা শুধুমাত্র এর ক্যাপাসিটি আর দাম দেখবো? আমরা কেন ভুলে যাই যে একটি পাওয়ার ব্যাংকের অন্যান্য এক্সট্রা কিছু সুবিধা থাকতে পারে! বর্তমানের পাওয়ার ব্যাংকগুলো আমাদের স্মার্টফোনের মতই স্মার্ট এবং কিছু বাড়তি সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেমন ধরুন, শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন – একটি পাওয়ার ব্যাংকে যদি এই সুবিধাটি থাকে তবে যে কোন কারণেই হোক আপনার পাওয়ার ব্যাংকটিতে যদি শর্ট সার্কিট হয় তবে সেটি আপনার ডিভাইসের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম হবেনা। শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন থাকার কারণে পাওয়ার ব্যাংকটি নষ্ট বা অকেজো হয়ে গেলেও আপনার ডিভাইসটি থাকবে একদম সুরক্ষিত।৪। অরিজিনাল কানেক্টর ব্যবহার না করা এটা মূলত কেনার পরের ঘটনা, তবুও যখন মাথায় এলোই তখন লিখেই ফেলি! একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস বিশেষ করে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন ডিভাইসগুলো কিনলে সেগুলোর প্যাকেটের সাথে খেয়াল করে দেখবেন লেখা থাকবে যেন সেই স্মার্টফোনটির সাথে দেয়া অরিজিনাল এক্সেসরিজগুলো ছাড়া অন্য কোন এক্সেসরিজ ব্যবহার না করা হয়। যদি প্যাকেটের গায়ে এরকম কিছু লেখা না দেখেন তবে অবশ্যই ম্যানুয়ালে এরকম কথা লেখা পাবেন। আমরা অনেকেই এই গাইড লাইনগুলো ফলো করিনা। ভেবে থাকি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এক্সেসরিজের বিক্রি বাড়াতেই হয়তো এরকম লিখে থাকে। কিন্তু, শুধুই যে তাদের বিক্রি বাড়াতে তারা এরকম লিখে রাখে তা কিন্তু নয় বরং আমাদের ডিভাইসের সেফটির বা ভালো (সর্বোচ্চ) পারফর্মেন্সের জন্যেও এরকম লিখে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। যাই হোক, পাওয়ার ব্যাংকের ক্ষেত্রেও আমাদের উচিৎ এর সাথে প্রোভাইড করা অরিজিনাল এক্সেসরিজ ব্যবহার করা। যেহেতু এই ডিভাইসটি আমাদের স্মার্টফোন বা ট্যাবের পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে তাই এটিকেও তো যত্নেই রাখা উচিৎ! যাই হোক, শর্ট সার্কিট এবং অন্যান্য সমস্যা এড়াতে এবং স্ট্যাবল ও পর্যাপ্ত আউটপুটের জন্য অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংকের সাথে এর মূল এক্সেসরিজগুলো ব্যবহার করবেন।
ওভার চার্জিং প্রোটেকশন – আমরা মাঝে মাঝে আমাদের স্মার্টফোন চার্জ দিয়ে ভুলে যাই! এর ফলে অতিরিক্ত সময় ধরে ব্যাটারি চার্জে থাকার কারণে স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি ওভার চার্জড হয়ে যায় যা স্মার্টফোনের ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়। আপনি হয়তো একদিনে এই সমস্যা ধরতে পারবেন না তবে একটু একটু করে একদিন দেখবেন যে ব্যাটারি আগে দৌড়াতো তা এখন আর চলেইনা ঠিক মত! যদি আপনার পাওয়ার ব্যাংকে এই ওভার চার্জিং প্রোটেকশন সুবিধাটি থাকে তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ হবার পর আপনার পাওয়ার ব্যাংক নিজে থেকেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার ডিভাইসটির সাথে পাওয়ার সরবারহ করা বন্ধ করে দিবে, ফলে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিও থাকবে সুরক্ষিত।
টেম্পারেচার প্রোটেকশন – স্মার্টফোনের ইতিহাসে সম্ভবত সবচাইতে ভয়াবহ ঘটনা গুলো ছিল এর ব্যাটারি রিলেটেড প্রবলেমগুলোই, যেগুলোর কারণে মানুষ মারা যাবার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে! এরকম আরও একটি সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। অনেকেই খেয়াল করবেন যারা থার্ড-পার্টি ব্যাটারি বা চার্জার ব্যবহার করেন তাদের স্মার্টফোন চার্জিং-এর সময় অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে যায় যা ডিভাইসের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই, আপনি যদি এমন একটি পাওয়ার ব্যাংক কেনেন যাতে টেম্পারেচার প্রোটেকশন সুবিধা আছে তাহলে মন্দ কি বলেন?
টর্চ-লাইট সুবিধা – আমি আসলে পাওয়ার ব্যাংকে টর্চ লাইট সুবিধা প্রিফার করিনা, খানিকটা চিপ মনে হয় তবে ফিচারটি কিন্তু মোটেও মন্দ নয়! টর্চ লাইট থাকলেই যে ব্যবহার করতে হবে তা তো নয়, তবে মাঝে মাঝে কিন্তু বেশ কাজে আসবে।
৬। রিয়েল আউটপুট দেয়না এরকম পাওয়ার ব্যাংক কেনা অনেক পাওয়ার ব্যাংক আছে যেগুলো আপনার ডিভাইসের পরিমাণ মত আউটপুট দিতে সক্ষম হয়না। এমনও অনেক পাওয়ার ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর পাওয়ার আপডাউন করে! এসব পাওয়ার ব্যাংক ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের ব্যাটারিকে নষ্ট করে ফেলে। তাই, রিয়েল বা পারফেক্ট আউটপুট দেয় এরকম পাওয়ার ব্যাংক কেনাই উত্তম।
৭। ইউএল সার্টিফিকেশন নেই এরকম পাওয়ার ব্যাংক কেনা ইউএল সার্টিফিকেশন মূলত একটি পাওয়ার ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি কনট্রোল করতে সক্ষম কি না এবং রিয়েল আউটপুট দিতে সক্ষম কিনা তা নির্ধারণ করে থাকে। তাই আপনি যখন পাওয়ার ব্যাংক কিনবেন তখন অবশ্যই মাথায় রাখবেন যে সেই পাওয়ার ব্যাংকটি ইউএল সার্টিফাই কিনা।
শেষ কথা:
বাজারে বর্তমানে বেশ কম দামেই জেনুইন ব্র্যান্ডের পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরেও হয়তো অনেকেই খুঁজে থাকেন সেগুলোর চাইতেও সস্তা গুলো। কিন্তু, আপনি যদি আপনার গ্যাজেটটি ভালোবাসেন তবে আমার মতে আপনার গ্যাজেটের সুরক্ষার কথা চিন্তা করেও আপনার উচিৎ পরিচিত ব্র্যান্ডের ভালো মানের একটি পাওয়ার ব্যাংক কেনা। বাজারে এখন শাওমি, রমস – ইত্যাদি ব্র্যান্ডের চমৎকার সব পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায়। শুধু কেনার সময়, চোখ-কান খোলা রাখবেন আর সাথে অবশ্যই মগজটাও চালু রাখবেন।

إرسال تعليق

Post a Comment (0)

أحدث أقدم